বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে শহরের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী বাহিনী লালনকারী. ছিনতাইকারী এবং ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগওঠেছে। মেয়র পদের প্রার্থী ছাড়াও অর্ধডজনের বেশি কাউন্সিলর পদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে এসব অভিযোগ। আর এ কারণেই পৌর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে।
গত মাসের শেষ দিকে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়াস্থ আশুঘোনা এলাকায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তর্কাতর্কির জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে। ভোট গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ততই বাড়ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ভোটারদের মতে, শহরের ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ড, ৪ নং ওয়ার্ড, ৫ নং ওয়ার্ড, ৭ নং ওয়ার্ড, ৮ নং ওয়ার্ড, ৯ নং ওয়ার্ড, ১১ নং ওয়ার্ড ও ১২ নং ওয়ার্ডের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী বাহিনী লালনকারী. ছিনতাইকারী এবং ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার। তবে সন্ত্রাসের আতংক সবচেয়ে বেশি ১২ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডে।
গত ২৯ জুন জুমার নামাজের পর ৭ নং ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছুরিকাঘাতে খুন হন কক্সবাজার সরকারী কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জেলা ছাত্রদলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এএইচ তানভীর আহমদ। ঘটনার পর শহরের অন্যান্য ওয়ার্ডেও ছড়িয়ে পড়ে চাপা উত্তেজনা। এরই মাঝে চলছে নানা উপায়ে নির্বাচনী প্রচারণা। নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা টাকা বিতরণ, হুমকী প্রদান, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর অনুরোধ, অনুরোধে কাজ না হলে হুমকী প্রদানসহ হেন উপায় নেই, যা প্রয়োগ করছেন না। হুমকী ও পোলারাইজেশনের কারণে অনেক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী প্রার্থী প্রবণ ওয়ার্ডগুলোতে প্রকাশ্যে ফেসবুকে নানা হুমকী প্রদান করা হচ্ছে। এতে শহরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উত্তেজনা। নির্বাচনকে ঘিরে এ উত্তেজনা আরো রক্তক্ষয়ী সহিংসতার আশংকা তৈরি করছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের নেতারা।
তবে পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন খন্দকার। তিনি বলেন, কোন অপরাধী প্রার্থী হলে তার প্রার্থীতা বাতিলের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা দেখব, যাতে কোথাও সহিংস ঘটনা না ঘটে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের সমর্থকদের মাঝে সংঘাতের আশংকা রয়েছে। এর মধ্যে ১২ নম্বর, ১ নম্বর, ৪ নম্বর, ৫ নম্বর, ৭ নম্বর, ৯ নম্বর ও ১১ ওয়ার্ড অন্যতম। এসব ওয়ার্ডে কিছু কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী অপরাধ লালনকারি ও নিজেও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। ফলে ভোট নিয়ে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তাতে সহিংসতার আশংকা দিন দিন জোরদার হচ্ছে। মেয়রের ভোট নিয়েও প্রায় সবকটি ওয়ার্ডে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
একই আশংকার কথা জানান কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই নির্বাচনী হত্যা, প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে চলমান উত্তেজনা আরো সহিংসতার লক্ষণ। পর্যটন রাজধানীর পৌরসভা হিসেবে এর পরিবেশ শান্ত ও নিরাপদ রাখা আবশ্যক। তাই অপরাধী ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ২৫ জুলাই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের ৮৬ প্রার্থী। এরমধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মুজিবুর রহমান (নৌকা), বিএনপির রফিকুল ইসলাম (ধানের শীষ), নাগরিক কমিটি সরওয়ার কামাল (নারিকেল গাছ), জাপার রুহুল আমিন সিকদার (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র জাহেদুর রহমান (হাতপাখা)। এছাড়া শহরের ১২টি ওয়ার্ডে ৬৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৭ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।
কক্সবাজার পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও মহিলা ভোটার রয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন।